চলমান যুদ্ধের মধ্যে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর ফেলা বোমার পরিমাণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিরোশিমায় ফেলা পরমাণু বোমার তুলনায় বহুগুণ বেশি বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা। ইউরোমেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরাইল প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৭০,০০০ টন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। তুলনামূলকভাবে, ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তি ছিল আনুমানিক ১৫,০০০ টন TNT।
এই হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গাজায় ফেলা বোমার শক্তি প্রায় ২ থেকে ৪.৫ গুণ হিরোশিমার সমান, যা ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সামরিক আগ্রাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। যদিও কিছু রিপোর্টে ৬ গুণ পর্যন্ত শক্তির উল্লেখ আছে, তা এখন পর্যন্ত স্বাধীনভাবে যাচাইযোগ্য হয়নি।
তুরস্কভিত্তিক দৈনিক ‘ডেইলি সাবাহ’ ও আল-জাজিরা জানায়, ইসরাইলের বোমা হামলায় গাজা অঞ্চলের বসতি এলাকা, হাসপাতাল, স্কুল এবং শরণার্থী ক্যাম্প ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ইউরোমেড হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুসারে, এই বোমাগুলোর মধ্যে অনেকেই উচ্চমাত্রার ফসফরাস এবং ভারী বিস্ফোরকসমৃদ্ধ, যা জনবহুল এলাকায় মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
গাজার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত ৩৬,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ শিশু ও নারী। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ আবাসিক ভবন ও অবকাঠামো।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলের এই হামলার মাত্রা ও পরিণতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা একে যুদ্ধাপরাধের আওতায় বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার বেসামরিক জনগণ এখনো মানবেতর অবস্থায় দিন পার করছে। বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা, খাদ্য ও বিদ্যুৎ–সবকিছুর অভাব চরমে। বারবার চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তু ছাড়াও, অসংখ্য সাধারণ বসতি ও আশ্রয়কেন্দ্র ইসরাইলি বিমান হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় ফেলা বোমার পরিমাণ কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ধ্বংসাত্মক ও একতরফা আগ্রাসনের প্রতীক হয়ে থাকবে।