শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাধারণ পরিষদের ৮ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ ও যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীনের যৌথ পরিচালনায় এই অধিবেশনে সারাদেশ থেকে প্রায় দুই সহস্রাধিক তৃণমূল নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
পরে একই স্থানে বিকেলে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার জরুরি অধিবেশনও বসে। উভয় অধিবেশনেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মজলিসে শুরার সদস্যগণ এবং তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ মৌখিক ও লিখিতভাবে জানান, তারা চান সংগঠনটি এককভাবে, অন্যান্য ইসলামী দলের সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে, নাকি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে নির্বাচনে অংশ নেবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মাওলানা মামুনুল হক এই তিনটি প্রক্রিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, যেকোনো মতামত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলাম, দেশ ও সংগঠনের কল্যাণকে পর্যায়ক্রমে বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রাজনীতিতে কাউকেই চূড়ান্ত বন্ধু বা শত্রু মনে করা যায় না, বরং ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যেই সিদ্ধান্তই গৃহীত হোক, সবাইকে তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মাওলানা মামুনুল হক সংগঠনের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সকল নেতাকর্মীকে আল্লাহর কাছে দোয়ার আহ্বান জানান এবং ঘোষিত প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্বাচনে জয়ী না হলেও আগামী পাঁচ বছর আপদ-বিপদে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের পাশে থাকতে হবে।
অধিবেশনে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, অভিভাবক পরিষদের অন্যতম সদস্য মাওলানা আকরাম আলী, নায়েবে আমির মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা আলী উসমান, মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী ও মাওলানা মাহবুবুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা আমিরে মজলিসের নেতৃত্বে যেকোনো সিদ্ধান্তে পূর্ণ আস্থা ও নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানান। তারা বলেন, তাদের মূল লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। প্রচলিত নির্বাচনে অংশগ্রহণকে তারা মূল লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন।
শুরা অধিবেশনে গৃহীত নয়টি প্রস্তাবনা ছিল:
১. সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন।
২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ।
৩. জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা ও গণভোটের দাবি।
৪. ফিলিস্তিন ও ভারতের মুসলিম নিধন বন্ধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ।
৫. কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা।
৬. সীমান্ত হত্যা বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার।
৭. ইসকনসহ সকল হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন মোকাবিলা।
৮. পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ।
৯. খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান।

