ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গেল ৫ আগস্ট দুপুরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি সে দেশেই অবস্থান করছেন। তার পদত্যাগ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাজ করছে। এর কারণ শেখ হাসিনা নিজেই। তিনি কিছুদিন আগে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন যে, তিনি পদত্যাগ করেননি। যেকোনো সময় চট করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন। এরপর মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, সাবেক একনায়ক হাসিনা সত্যিই কি পদত্যাগ করেছেন।
এদিকে গত ১৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিককে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।অথচ শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে রেখে বলেছিলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
রাষ্ট্রপ্রধানের এই দুরকম বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন,
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মতো মানুষ যদি বলেন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের ডকুমেন্টস তিনি রাখেননি, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা ছাত্র-সমাজই নির্ধারণ করবে।
সারজিস আলম আরও বলেন,
ফ্যাসিস্ট সিস্টেম এখনও সরেনি। বিভিন্ন এজেন্সি ও কুচক্রী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা আবার রাজপথে নামব।
বিষয়টি নিয়ে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ভিডিও বার্তায় বলেন,
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তির উত্থান ও পুনর্বাসন ঠেকাতে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। আপনারা দেখেছেন রাষ্ট্রপতি বলেছেন শেখ হাসিনা তার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন আবারও বিভিন্ন পাঁয়তারা শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা স্বৈরাচারের পতিত আত্মারা বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমাদের একটাই পরিচয় ছিল। আওয়ামী লীগ ছিল জালিম আর আমরা ছিলাম মজলুম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা পৃথক হয়েছি যার কারণে একটি গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এই গ্যাপটির সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের আবার একত্রিত হতে হবে। আমরা দলীয় স্বার্থে যদি আলাদা হয়ে যাই তাহলে আওয়ামী লীগ আবারও সুযোগ নিবে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন,
রাষ্ট্রপতি যে দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট যে তিনি শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিতে চান। আমরা অফিসিয়ালি দ্রুতই আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব। আজ বিকালেই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস এবং শহরে বিক্ষোভ হবে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি আসবে।

