সাধারণ ভারতীয়রা যখন ইসরায়েলের গোঁড়া সমর্থক বলে পরিচিত এবং ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমও লাগাতার ইসরায়েল-ঘেঁষা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের একটি প্রান্ত পুরো দেশের মধ্যেই এক অদ্ভুত ব্যতিক্রম।
জায়গাটি আর কোথাও নয় – চীন ও পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা লাদাখের কার্গিলে, যা ঠিক ২৫ বছর আগের এক গ্রীষ্মে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মারাত্মক লড়াইয়েরও সাক্ষী থেকেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে, এই আশঙ্কা যখন দিনদিন বেড়েই চলেছে – তখন ভারতেরই একটি প্রত্যন্ত অংশ লাদাখের কার্গিল জেলার লোকজন নিয়ম করে ইরানের সমর্থনে পথে নামছেন। আয়াতুল্লাহ্ খামেনির ছবি নিয়ে মিছিল করছেন কিংবা হিজবুল্লাহর হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।
এমনকি যে কেউ বাইরে থেকে এলে চট করে হয়তো বুঝতেই পারবেন না জায়গাটি ভারতে, না ইরানে!
লাদাখের কার্গিল জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শিয়া মুসলিম, আর ইরানের সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও আত্মিক যোগাযোগও খুব গভীর। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে তারা যে ইরানের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন ও নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন, তার একটা গভীর পটভূমি আছে।
মাসকয়েক আগে সেই ইব্রাহিম রাইসি যখন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হলেন, তাকে শেষ বিদায় জানাতেও কার্গিলের জনগন চোখের জলে পথে নেমে এসেছিলো।
ভারতের অন্যত্রও প্রচুর শিয়া মুসলিম আছেন, বস্তুত ইরানের বাইরে বিশ্বের যে দেশে সবচেয়ে বেশি শিয়া বসবাস করেন সেটি হল ভারত। সংখ্যায় তারা মোট তিন থেকে চার কোটির মতো হবেন বলে ধারণা করা হয়।
ইরান তথা ইরানের বিপ্লবের আদর্শের প্রতি সংহতি জানাতে কার্গিলের শিয়ারা কিন্তু কখনওই দ্বিধা বা সঙ্কোচে ভোগেনি। পাশাপাশি এটাও ঠিক, ভারতের প্রতি তাদের ‘দেশপ্রেম’ নিয়েও কেউ কখনও প্রশ্ন তোলার সুযোগ পায়নি।
বিগত কয়েক দশকে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা, বাণিজ্যিক বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা যত বেড়েছে, ততই ভারতের অধিকাংশ মানুষজন মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে খোলাখুলি ইসরায়েলকে সমর্থন জানাচ্ছেন। অপরদিকে কার্গিল কিন্তু ইসরায়েলের বিরোধিতায় কখনও আপোষ করেনি।
বিষয়টি যখন ইসরায়েল বিরোধিতার, তখন শুধু ইরান নয়, গাজার ফিলিস্তিনিদের হয়েও নিয়মিত পথে নেমেছেন, আওয়াজ তুলেছেন কার্গিলের জনগন।

