২০২৫ সালের ২৫শে মার্চ বিকেলে, যখন উত্তর গাজার “বাইতে লাহিয়া” নামক স্থানে বিশাল জনতাকে একটি বিক্ষোভ সমাবেশে জড়ো হতে দেখা যায়। সমাবেশে শত শত মানুষ সাদা পতাকা নিয়ে বেরিয়ে আসে। তারা একটি জায়গায় পৌঁছে স্লোগান দিতে শুরু করে:
“আমরা যুদ্ধ চাই না! হামাস আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে!”
বিশ্ব মিডিয়া তৎক্ষণাৎ তাদের দিকে মনোযোগ দেয়। যায়নাবাদি মিডিয়া বিশ্লেষকদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তারা হাসতে হাসতে বলে যে, দেখো এখন গাজার ফিলিস্তিনি অধিবাসীরা নিজেরাই হামাসের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে!”
তারপর এই বিক্ষোভকারীরা হাঁটতে শুরু করে। তাদের মিছিল “বাইতে লাহিয়া” থেকে শুরু হয়ে গাজা শহরের বাইতে হানুন হয়ে অবশেষে খান ইউনিসে পৌঁছে, যেখানে তারা দীর্ঘ সময় ধরে স্লোগান দেয়, তারপর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পরবর্তী বেশ কয়েকদিন ধরে বিশ্ব মিডিয়ায় জল্পনা কল্পনা চলে। কিন্তু তারপর এই ঘটনাটি সময়ের ব্যবধানে চাপা পড়ে যায়।
এখন যখন যুদ্ধবিরতি চলছে, তখন এই বিক্ষোভ মিছিলের এমন কিছু সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে যা দেখে বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হতবাক হয়ে গেছে। ইসরায়েলি বিশ্লেষক এবং বিশ্বের শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বলে পরিচিত মোসাদ কর্মকর্তারা তো রীতিমত নির্বাক হয়ে পড়ে।
ইসরায়েলি বন্দীরা বলে যে, এই বছরের মার্চ মাসে, যখন পূর্ব গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চাপ বৃদ্ধি পায়, তখন হামাস তাদের অধিনস্ত বন্দিদের গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময়, গাজার উপর ইসরায়েলি ড্রোনগুলো ঘুরছিলো এবং ইসরায়েলি গুপ্তচর ও বিশ্বাসঘাতকরা এই বন্দীদের খুঁজছিল। এই বন্দীদের সম্পর্কে তথ্যের জন্য পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছিলো। ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে এত দূরে তাদের স্থানান্তর করা সম্ভবপর ছিল না।
এমন পরিস্থিতিতে, ইসরায়েলি বন্দীদের স্থানান্তরের কাজটি কাসাম ব্রিগেডের গোপন “আজ্জিল্ল ইউনিট” কে দেওয়া হয়। যারা তাদের কর্মী এবং বিশ্বস্ত অনুগতদের নিয়ে একটি “হামাস-বিরোধী” বিক্ষোভের আয়োজন করে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী লোকেরা তাদের স্লোগান এবং জনসাধারণের কোলাহলকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে বন্দিদের সমাবেশের ভেতরে মিলিয়ে দেয়। মিছিলের কেন্দ্রস্থলে আল-কাসসাম মুজাহিদিন বন্দীদের ঘিরে ফেলেছিল। বন্দীদের ইতোমধ্যেই নির্দিষ্ট কিছু আরবি স্লোগান শেখানো হয়। মিছিল চলাকালীন বন্দীদের হামাস-বিরোধী স্লোগান দিতে বলা হয় । বন্দীদের দেওয়া নির্দেশাবলী স্লোগানের শব্দে ভেসে যেত। এমনকি যদি কোনও ইসরায়েলি বন্দী চিৎকারও করত, কেউ তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেত না।
প্রসিদ্ধ ইসরায়েলি বন্দীদের মুখ লুকানোর জন্য, আল-কাসসাম সৈন্যরা তাদের সহযোদ্ধাদের কাঁধে করে সামনের দিকে হাঁটত, যাতে কেউ তাদের পিছনে লুকিয়ে থাকা বন্দীদের দেখতে না পায়। অবশেষে, পরের দিন খান ইউনিসের কাছে যখন একটি বিক্ষোভে জনতা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিল তখনই
বন্দীদের চুপচাপ একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের মুখে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইসরায়েলি বন্দীরা বলেছিল যে, ড্রোনগুলো পুরো সময় আকাশ থেকে মিছিলটি পর্যবেক্ষণ করেছিল, কিন্তু তারা বন্দীদের স্থানান্তরিত হওয়ার বিন্দুমাত্র দৃশ্য দেখতে পারেনি।
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, যুদ্ধ কেবল অস্ত্র আর শক্তি দিয়েই হয় না। যুদ্ধে সঠিক সময়ে সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে পারাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হামাস প্রতিটি ফ্রন্টে ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের পরাজিত করেছে সঠিক সময়ে সঠিক কৌশল অবলম্বন করেই। বিশেষ করে বন্দীদের সুরক্ষা এবং পরিবহনের জন্য গৃহীত গোপন এবং জটিল কৌশল বিশ্বকে অবাক করেছে।
এই ঘটনাটি কেবল একটি যুদ্ধ কৌশল নয় – বরং বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য এবং বেঁচে থাকার যুদ্ধে, টিকে থাকার লড়াইয়ে একটি উদাহরণ। যা হামাসের প্রতিরোধের চেতনার রহস্য। সম্ভবত সে কারণেই, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্কও তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও বারবার হামাসের কাছে পরাজিত হয়।
সুত্র: আন্তর্জাতিক মিডিয়া থেকে সংগৃহীত

