ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছেন। তবে এতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের প্রতিরোধের তেজ কমবে না। সিনওয়ারের মৃত্যুর পর হামাসের দায়িত্বে আসছেন প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য খালেদ মাশাল। ইতিমধ্যেই খালেদ হামাসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।
১৯৫৬ সালে সিলওয়াদের পশ্চিম তীরের রামাল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খালেদ মাশাল। মাশাল ১৯৭৪ সালে কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হন। তিনি ১৯৭৭ সালে ফিলিস্তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে ইসলামিক জাস্টিস লিস্টের নেতৃত্ব দেন। স্নাতক হওয়ার পরে মেশাল পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন।
এরপর ১৯৮৪ সালে হামাস গঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে রাজনীতিতে যুক্ত করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৭ সালে পর্যন্ত তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সভাপতি ছিলেন।
খালেদ মাশাল ১৫ বছর বয়সেই বিদ্রোহের আঙিনায় পা রাখেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে রামাল্লায় জন্মানো এই খালেদ হামাসের জন্মলগ্ন থেকে রয়েছেন। ১৯৯৬ সালে মাশালকে যখন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান বানানো হয়েছিল, তখন থেকেই তাঁকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের গুপ্তচর বিভাগ বহু চেষ্টার পরও পারেনি খালেদকে মারতে। ১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্দেশে মোসাদ এজেন্টরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। মোসাদ এজেন্টরা জাল কানাডিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডানে প্রবেশ করেছিল এবং রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মাশালকে বিষাক্ত পদার্থের ইনজেকশন দিয়েছিল। তারপর সেই গুপ্তচররা জর্ডান থেকে আর পালিয়ে যেতে পারেনি।
এদিকে, বিষ দেওয়ার পর খালেদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এরপর সেই বিষের অ্যান্টিডোট দিয়ে খালেদকে বাঁচিয়ে তুলতে বড় পদক্ষেপ নেয় জর্ডান। এই ঘটনা ঘিরে জর্ডান ও ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্কও প্রভাবিত হয়। ততক্ষণে কোমায় চলে যাওয়া খালেদ ফের সুস্থ হতে থাকেন। সেই থেকেই খালেদ মাশালকে ‘জীবন্ত শহিদ’ বলে থাকেন অনেকে।
জর্ডান সরকার এই হত্যা চেষ্টার বিষয়ে জানতে পারে এবং মোসাদের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। জর্ডানের প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হস্তক্ষেপে নেতানিয়াহুকে প্রতিষেধক সরবরাহ করতে বাধ্য করায় এই হত্যা প্রচেষ্টা একটি রাজনৈতিক মাত্রা পায়। মাশাল ইসরাইলের সঙ্গে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুসালেমকে নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করতে চান। মাশাল এখন দোহা ও কায়রোতে বাস করছেন। তাঁর জীবনের বেশিরভাগ কেটেছে ফিলিস্তিনের বাইরে।