রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ এবং ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল রাজধানী। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি যখন জোরদার হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। গতকাল বিকালে প্রধান বিচাপতির দপ্তরে এ রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায় , প্রায় ৪০ মিনিটের মতো প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে কে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান বিচারপতি আইজিপি, র্যাব ডিজি ও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এর আগে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত নেওয়া হয়। আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়ে স্পেশাল রেফারেন্স পাঠানোর পরই উপদেষ্টাদের শপথ পড়ানো হয়। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জোরালো হওয়ার পর থেকে সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আবারও সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাইতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন অবস্থায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন দুই উপদেষ্টা। একই দাবিতে আজ ইনকিলাব মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করবেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আদিলুর রহমান।
গত রাতে একদল বিক্ষোভকারীকে বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করতে দেখা যায়। সেখানে উপস্থিত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। এদিকে বঙ্গভবনের সামনে আহত পাঁচজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহেই নতুন রাষ্ট্রপতি ঠিক করে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বিদায় করা হবে- আন্দোলনকারীদের রাতে এমন বার্তা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আরেক নেতা সারজিস আলম। এই আশ্বাস পেয়ে টানা কয়েক ঘণ্টার আন্দোলন শেষে বঙ্গভবনের সামনে থেকে সরে যেতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আসেন।
এ সময় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন,
এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করা হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগী। তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিলে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে- আন্তর্জাতিক মহলে এমনটা প্রচারের সুযোগ পাবে শত্রুরা। তাই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করা হবে। সেনাপ্রধান এখন দেশে নেই। তিনি দেশে আসার পর সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হবে। যাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না। এই সপ্তাহের মধ্যেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি ঠিক করে মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করা হবে।
সারজিস আলম বলেন,
একটি যুদ্ধে কৌশল হলো গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গতকাল ফ্যাসিস্টের দোসর রাষ্ট্রপতির যে কথাটি শুনেছিলাম, তাতে আমাদের রক্ত টগবগিয়ে মাথায় উঠে যায়। এই রক্তের ক্ষত এখনো ভাসছে। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনই তার পদত্যাগ করিয়ে ফেলি তাহলে রাষ্ট্রের বড় ক্ষতি হতে পারে। আমরা কৌশলের কাছে হেরে না যাই। আমাদের আন্দোলনে ভিতর ঢুকে দু-একজন ফ্যাসিস্টদের দোসর উসকানি দিতে পারে। কারণ, দেশকে অস্থিতিশীল দেখানো গেলে তারা ফায়দা লুটতে পারবে। তাই আমাদের সঙ্গে যাদের মতপার্থক্য রয়েছে তারা রাজপথে এসে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা দুই দিন সময় দিয়েছি। সবকিছু ভেবেই সময় দেওয়া হয়েছে। এখানে যারা এসেছেন সবাইকে শ্রদ্ধা জানাই। বিশেষ করে এখানে গণ অভ্যুত্থানে আহতদের ইমোশনকে শ্রদ্ধা জানাই। হেডডাউন করা শ্রদ্ধা জানাই আপনাদের। যৌক্তিক সিদ্ধান্তের জন্য আপনাদের সামনে দিয়ে পেছনের লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা আপনাদের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাব।