অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূ-খণ্ড গাজা থেকে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ হামাসের সশস্ত্র মুজাহিদরা যায়নবাদীদের তৈরি করা সুউচ্চ প্রাচীর টপকে ইসরাইলে প্রবেশ করে। তারা সেখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং বেশকিছু সাধারণ মানুষের উপরও হামলা চালায়। ফলে ইসরাইলে ১১৮৯ সেনা ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। বন্দি হয় ২৫১ জন ইসরাইলি।
হামাস কেন এত বছর সবর করার পর ইসরাইলে হামলা চালালো? এই প্রশ্নের উত্তর এখন বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকায় কম করে ২৩ থেকে ২৪ লক্ষ বনিয়াদম অবরুদ্ধ ও মানবেতর জীবনযাপন করছিল। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘দুই রাষ্ট্র চুক্তি’তে সম্মতি জানালেও ইসরাইল নরঘাতক নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে তা বাতিল বলে ঘোষণা করে। মোড়ল আমেরিকা-সহ বিশ্ববাসী কিন্তু শান্তির স্বার্থে সমর্থন জানিয়েছিল এই ‘দুই রাষ্ট্র সামাধান’কে। কিন্তু পরে স্পষ্ট বোঝা যায়, এটা ছিল যায়নবাদী ইহুদিদের একটি সময়োক্ষেপের পরিকল্পনা। তাদের আসল লক্ষ্য হল, ইসলামের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দস-সহ সমগ্র জেরুসালেমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। এ ছাড়া যায়নবাদীরা ‘ইরেজ ইসরাইল’ বা বৃহত্তর ইসরাইলের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে রয়েছে। তারা আরব ভূমিতে এই ‘ইরেজ ইসরাইল’ প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। তারা ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করলেও ফিলিস্তিনিদের কোনও ধরনের আলাদা জমি বা অধিকার দিতে নারাজ।
দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা ও পশ্চিমাদের অবৈধ সন্তান ইসরাইল তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে গাজা বা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের কোনও ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। তাহলে এরা যাবে কোথায়? এ বিষয়েও কিন্তু যায়নবাদী ইসরাইল, সুসভ্য পশ্চিমা বিশ্ব এবং খ্রিস্টান দুনিয়া নীরব। সকলেই জানেন, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূমিতে পশ্চিমারা সন্ত্রাসের জোরে ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। এরপর তারাই ইসরাইলকে রক্ষার ও অস্ত্র-অর্থ দেওয়ার গ্যারান্টি প্রদান করে। আর তারা এই গ্যারেন্টি সব অবস্থায় রক্ষা করে চলেছে।
হামাস এজন্যই সীমান্ত প্রাচীর টপকে ইসরাইলের অভ্যন্ত আক্রমণ চালায়। কারণ, তাদের কথা সকলেই ভুলে গিয়েছিল। এমনকি আরব দুনিয়ার বাদশাহ ও স্বৈরশাসকরাও ইসরাইলের বন্ধুত্ব অর্জনকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার চাবিকাঠি মনে করতে শুরু করেছিল। তারা বিস্মরিত হয়েছিল, মসজিদুল আক্সা এবং পবিত্র জেরুসালেমকে। ভুলে গিয়েছিল লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি মুসলিম নারী, বৃদ্ধ, শিশুর কথা। তেল ও জনগণের টাকায় নিজেদের আরাম-আয়েশকেই মুখ্য উদ্দেশ্য বলে এইসব রাজা, বাদশাহ, স্বৈরশাসকরা ধরে নিয়েছিল।
তারপর গাজা যুদ্ধে ইসরাইল যখন হাজার হাজার নারী, শিশু, বৃদ্ধকে হত্যা করছে, তখন মুহাম্মদ বিন সালমান, আল সিসি, আরব আমিরাত ও জর্ডনের রাজারা যেকোনও মূল্যে ইসরাইলের তাঁবেদারি করতে প্রস্তুত। সউদি আরব তো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল।
তাই নিজেদের এই অপমান ও অসহায়ত্বের জিন্দেগি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হামাস ৭ অক্টোবর ২০২৩ ইসরাইলের উপর হামলা চালিয়েছে। আর তারপর থেকে ইসরাইল গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। হত্যা করেছে প্রায় লাখ খানেকের বেশি নারী-পুরুষকে। আহত অসংখ্য। এখন তারা ‘ইরেজ ইসরাইল’ কায়েমের লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধকে বিস্তৃত করেছে পশ্চিম তীর, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এবং ইরানেও। ধ্বংস করে দিচ্ছে সেখানে অবস্থিত মানব সভ্যতাকে। কারও মুখে এর কোনও প্রতিবাদ নেই। পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলের এই মুসলিম নিধন ও দেশগুলির উপর আক্রমণে হাততালি দিচ্ছে। আর অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করে যাচ্ছে ইহুদিদের।
কিন্তু একটা কথা ঠিক, এই যুদ্ধ প্রমাণ করেছে ইসরাইল কোনও অপরাজেয় শক্তি নয়। তারা এখনও পর্যন্ত একটি ছোট জনপদ গাজার দখল নিতে পারেনি। হামাস লড়ে যাচ্ছে প্রবল শক্তিতে। আর আয়রন ডোমের বারটা বাজিয়ে দিয়েছে ইরান ও হিজবুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত হয়তো বা ন্যায়ের পক্ষের সত্যিই বিজয়ী হবে। এক বছর পরও হামাসের অদম্য প্রাণশক্তি এবং দাঁত কামড়ে লড়াই তারই সংকেত দিচ্ছে।