ঈদুল আজহা আসন্ন! হাতে গোনা আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। আগামী শনিবারে সারা দেশে আনন্দ উৎসবের সাথে পালিত হবে মহান ত্যাগ ও তিতিক্ষার কুরবানির ঈদ। বাংলাদেশে এমন একটি সময়ে ঈদের আগমন ঘটছে যখন দেশের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলের মানুষ মৌসুমি অতি বৃষ্টি আর ঝড় তুফানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। বাড়তি পানিতে তাদের ঘর বাড়ি ডুবে গেছে। দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে।
অপর দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে যখন মধ্যবিত্তরাই পেরেশান তখন দরিদ্র মানুষের অবস্থা কেমন হতে পারে তা খুব সহজেই অনুমেয়। এই সময়ে আমরা যেমন আমাদের পকেটের কথা চিন্তা করি তেমনি ঐ সমস্ত দরিদ্র মানুষের দীনতার কথাও ভাবা উচিত যারা দিন আনে দিন খায়। ঈদুল ফিতরের সময় তো গরিবদের প্রতি কিছু না কিছু খেয়াল করা হয় সাদাকাতুল ফিতর, যাকাত ফিদয়া ইত্যাদি আদায়ের মাধ্যমে। কিন্তু কুরবানির ঈদে বিশেষ খেয়াল করা হয় না গরিবদের প্রতি।
কুরবানি তো ত্যাগ ও তিতিক্ষার নাম, রাহে লিল্লাহে নিজের জানের চাইতে প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করার জযবা তৈরি করে এই কুরবানি। স্মরণ করিয়ে দেয় হযরত ইব্রাহিম আঃ এর কলিজার টুকরা সন্তান হযরত ইসমাইলের গলায় খোদা প্রেমে ছুড়ি চালনার জযবা-আকাঙ্ক্ষাকে। মুসলিম মিল্লাত যেন পশু কুরবানির মাধ্যমে সেই ইব্রাহীমি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। শুধু বাহ্যিক জন্তু কুরবানি করার দ্বারা কি সেই জযবা ও নিঃস্বার্থতা হাসিল হবে?
আল্লাহ বলেছেন যে তার কাছে কুরবানির পশুর গোশত রক্ত কোনোটাই পৌঁছেনা। তিনি তো কেবল বান্দার তাকওয়া দেখেন (সুরা হজ্ব 37)।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা যে দ্বীনে হানিফের অনুসারী এটা আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। এই দ্বীনে প্রত্যেক ইবাদাতের গাইডলাইন দেওয়া রয়েছে। প্রতিটি আমলের বাহ্যিক উদ্দেশ্যের সাথে সাথে রুহানী মাকসাদও বর্ণনা করা হয়েছে।কুরবানি সম্পর্কেও আমাদের অনুধাবন করা উচিত যে এর মাকসাদ কি?
হযরত ইব্রাহিম আঃ এর মহান স্মৃতিচারণ ও জযবায়ে ইব্রাহিমি মানসপটে লালন করার পাশাপাশি এর অন্যতম আরেকটি উদ্দেশ্যও রয়েছে।
কুরআনে কারিমে আল্লাহ পাক বলেন, অতঃপর তোমরা তা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও (সুরা হজ্ব 29)
তো কুরবানির অন্যতম মাকসাদ হলো কুরবানি কৃত জন্তুর গোশত অভাবগ্রস্ত লোকদের কাছে পৌঁছানো তাদের খাওয়ানো। যদি কেউ তার কুরবানিকৃত জন্তুর গোশত গুরাবাদের মাঝে কিছু অংশ বণ্টন না করে পুরোটাই আগামী এক বছরের জন্য ফ্রিজিং করে রাখে তাহলে তার কুরবানি তো হবে, কিন্তু এইরকম কুরবানির দ্বারা কি ত্যাগ তিতিক্ষার ইব্রাহিমি জযবা তৈরি হতে পারে?
ঈদুল আজহা আনন্দ নিয়ে আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ৫৭টি মুসলিম প্রধান দেশ এবং অমুসলিম দেশের মুসলমানগণ সানন্দে ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। ইসলামে ঈদ খুশির উৎসব। কিন্তু সেই খুশি প্রকাশের পদ্ধতিও নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দিনে মুসলমানদের পরিচ্ছন্ন হওয়া, সুন্দর ভাবে গোসল করা,ভালো কাপড় পরিধান করা, খুশবু ব্যবহার করা ইত্যাদি এগুলো যেমন বাহ্যিক ঈদের মাসনুন আমল, তদ্রূপ ঈদের রুহানী মাকসাদ হলো আমরা যেমন সুখে শান্তিতে ঈদ উদযাপন করবো তেমনি গরিবদের মুখেও কিছুটা হাসি ফোটাতে সচেষ্ট হবো। তাতে শুধু সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ খুশি হবে না, খুশি হবেন স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলাও।
সুতরাং আমরা আমাদের চারপাশের অভাবগ্রস্ত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের প্রতি যেন খেয়াল করি। কুরবানির গোশত তাদের কাছে যেন পৌঁছে দিই। বিশেষত আত্মমর্যাদাশীল গরিব মানুষ, যারা শত অভাব আর কষ্টকে সহ্য করেও কখনো কারো কাছে হাত পাতেনা তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত প্রসারিত করে দিতে হবে। সেই সাথে ঈদের আনন্দঘন মুহূর্তে ফিলিস্তিন কাশ্মীরের মাজলুমানের কথা যেন ভুলে না যাই।
হামিদুল ইসলাম নাফিস
খতীব,ভাংনা বড় মসজিদ কেরানীগন্জ, ঢাকা।
চেয়ারম্যান,বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম কাউন্সিল।