একজন অমুসলিম ক্রিকেটার হিসেবে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান দলে খেলা শুরু ইউসুফ ইউহানার। এরপর ২০০৪ সালে প্রথম খ্রীষ্টান ক্রিকেটার হিসেবে তিনি পাক দলকে নেতৃত্বও দেন। যদিও এর ঠিক পরের বছর ২০০৫ সালে সারা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন ইউসুফ ইউহানা।
পরবর্তীতে তিনি ইউসুফ ইউহানা থেকে মুহাম্মদ ইউসুফ নামে পরিচিত হন। একই সঙ্গে তার স্ত্রী তানিয়াও নিজের ধর্ম পরিবর্তন করেন। তিনিও নিজের নাম রাখেন ফাতিমা। হঠাৎ করে তিনি কেন নিজের ধর্মত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে এলেন? এর উত্তরে ইউসুফ স্বীকার করেন, সাঈদ আনোয়ারের কন্যার মৃত্যুর পর তার সতীর্থ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সেই শোক কাটিয়ে শান্তির খোঁজে আনোয়ার পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মের পথে পুরোপুরি নেমে পড়েন। তাতে তিনি নাকি সাঈদ আনোয়ারের জীবনে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন। তাতে ইউসুফ নিজেও ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।
ধর্ম পরিবর্তনের পর তার ক্রিকেট কেরিয়ারে যে অভাবনীয় সাফল্য আসে, তা দেখে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ইউসুফ নিজেই। উইজডেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউসুফ স্বীকার করে নেন, ইসলাম ধর্মগ্রহণের পর তিনি আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন।
২০০৫ সালে ইউসুফ ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। সে বছরই তিনি লাহোরে ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৯ বলে ১৭৩ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন। তারপর ২০০৬ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরেও তিনি ভালো পারফরম্যান্স করেছিলেন। এমনকী সেইবছর একটি ক্যালেন্ডার ইয়ারে সবচেয়ে বেশি রান করে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ভিভিয়ান রিচার্ডসের (১৭১০ রান) রেকর্ডও ভেঙে দেন। সেইবছর ইউসুফ ১,৭৮৮ রান করেছিলেন। সেবারেই তিনি নিজের অভাবনীয় ব্যাটিংয়ে মন জয় করেছিলেন গোটা বিশ্বের।
হঠাৎ তার ব্যাটিং পারফরম্যান্সের ধার বেড়ে যাওয়ার পিছনে ইউসুফ ইসলাম ধর্মগ্রহণকেই তুলে ধরেছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে ইউসুফ বলেন,
‘সাঈদ আনোয়ার আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। মেয়ের মৃত্যুর পর ক্রিকেট ছেড়ে ধর্মের পথে নেমে পড়েছিলেন আনোয়ার। মাঠের ভিতরে হোক কিংবা বাইরে, আমরা কিন্তু সেই বন্ধুত্ব বজায় রাখতাম। ছোট থেকেই আমরা একসঙ্গে প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। ওর বাবা-মা আমাকে নিজেদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। আমি যখনই ওদের বাড়িতে যেতাম, দেখতাম ওর বাবা-মা কতটা শান্ত জীবনযাপন করেন। তার থেকেও বড় কথা ওদের জীবনে একটা অনুশাসন রয়েছে। সেই বিষয়গুলি আমাকে ইসলাম গ্রহণে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ ‘আমি সাঈদ আনোয়ারের জীবন ধার্মিক হওয়ার আগে কিংবা পরে, দুটোই দেখেছি। ওর জীবন যাপন আমার কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। বলা ভালো, ওটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে। এরপর আমিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম।
২০০৫ সালের শেষদিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলাম। তখনই প্রথমবার নামায পড়েছিলাম। তারপর থেকে আমি দাড়ি বাড়াতে শুরু করি। ধীরে ধীরে মনের মধ্যে একটা আলাদা শান্তি অনুভব করতে থাকি।
২০০৬ সালে আমি ব্যাট হাতে যে পারফরম্যান্সটা করেছিলাম, সেটা আসলে পবিত্র আল্লাহ’র দেওয়া উপহার ছিল। আমি মনে করি, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলাম বলেই আল্লাহ আমাকে ওই উপহার দিয়েছিলেন। আমি কখনই ভাবতে পারিনি যে একদিন কিংবদন্তি ভিভিয়ান রিচার্ডসের রেকর্ড ভেঙে দেব। কিন্তু সেটা আমি পেরেছিলাম। মানসিকভাবে আমি শান্ত থাকতে পারায় আমি মাঠে নিজের সেরা পারফর্ম উজাড় করে দিতে পেরেছিলাম।’
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের হয়ে ৯০টি টেস্ট, ২৮৮ একদিনের ম্যাচ এবং ৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলেন ইউসুফ। তিন ফরম্যাটে তাঁর রানসংখ্যা যথাক্রমে ৭৫৩০, ৯৭২০ এবং ৫০।