পশ্চিমা বিশ্ব প্রায়ই আফগান মুসলিম মহিলাদের ইসলামিক পোশাকের জন্য তাদের মিথ্যা উদ্বেগ প্রকাশ করে। পশ্চিমা মিডিয়া নিয়মিতভাবে বোরকা/হিজাবকে আফগান মহিলাদের তাদের খুশি মত পোশাক পরার স্বাধীনতার উপর আক্রমণ হিসাবে চিত্রিত করে। সাধারণ পশ্চিমারা বিস্মিত যে কেন মহিলাদের তাদের মতো শর্টস, জিন্স বা ক্রপ-টপ পরে রাস্তায় ঘুরতে না গিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে।
তারা বিস্মিত কারণ তাদের কখনই আইনগতভাবে নিজেদেরকে পর্যাপ্তভাবে ঢেকে রাখার প্রয়োজন ছিল না যাতে সমাজে তাদের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা হয়। দুঃখজনকভাবে, তাদের সরকার নারী নাগরিকদের আত্মসম্মান রক্ষার বিষয়ে নিজেদেরকে কখনোই উদ্বিগ্ন করেনি, বরং তাদের নিজেদের অবক্ষয়ের মূল্যে এমনকি তাদের পুরুষ সহযোগীদের দৃশ্যত সন্তুষ্ট করে এমনভাবে পোশাক পরার অনুমতি দেয় এবং উৎসাহিত করে। পশ্চিমা নারী তার যৌবন এই প্রচেষ্টাতেই ব্যয় করে।
গ্রীষ্মের উত্তাপে, সে এমনভাবে পোশাক পরে যা তাকে তার দেশের পতিতাদের থেকে দৃশ্যত পার্থক্যহীন করে তোলে। এটা, তার জন্য, স্বাভাবিক। সে যে পুরুষের মনোযোগ পায় তাই তার কাছে তার আত্মমর্যাদা , ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এটি তার জীবনের উপভোগের অন্যতম প্রধান উৎস। তাই সে বুঝতে পারে না কিভাবে অন্য দেশে নারীরা এই সব ছাড়া ইসলামিক পোশাকে সুখে থাকতে পারে। এই কারণেই সে হিজাবকে এড়িয়ে চলেন — কারণ এটি তার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত।
যাইহোক, সে ব্যাখ্যা করতে পারে না কেন হিজাবের এই বিধিনিষেধ খারাপ। প্রতিটি মানুষ সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। বিধিনিষেধ নিশ্চিত করে যে আমরা নৈতিক অন্যায় করি না। নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও নেই। পশ্চিমারাও, একজন মহিলা তার দেহ প্রকাশ্যে কতটা প্রকাশ করতে পারে এর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, অর্থাৎ নারীদের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দেয় না। একজন নারী কতটা খোলামেলা পোশাক পরতে পারে, পশ্চিমের এই বিধিনিষেধ যদি গ্রহণযোগ্য হয় তবে ইসলামী আমিরাতের বিধি-নিষেধ কেন অগ্রহণযোগ্য?
এর কারণ হলো,
ইসলামী আমিরাত কর্তৃক আরোপিত নারীদের পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত।
পশ্চিমারা অবশ্য আক্রমনাত্মকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে যার কারণে তাদের সমাজ চরম অধঃপতন ও অশ্লীলতার মধ্যে রয়েছে। এর ফলে যা ঘটে তা হল – সকল ভালো, শুদ্ধ ও ধার্মিক কিছুর প্রতি তাদের বিরোপ ধারনা তৈরি হয়েছে। সতীত্বের ধারণার সাথে তারা সম্পূর্ণ অপরিচিত। পশ্চিমা নারী এমন আইনকে ঘৃণা করে যা তার জীবনযাত্রায় হস্তক্ষেপ করে যেখানে হেডোনিজম সর্বোচ্চ রাজত্ব করে।
পশ্চিমা নারীরা খুবই খারাপভাবে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের শিকার। ম্যাগাজিন, টিভি শো, সিনেমা এবং আরও অনেক কিছু নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের নারীদের ভদ্রতার সবটুকু অংশ ছিনিয়ে নিতে, যা কিনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের সহজাত স্বভাবের অংশ বানিয়েছেন। তাদের এই বিশ্বাসে মগজ ধোলাই করা হয় যে, অরক্ষিতভাবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা আরো বেশি সুখের ।
যাইহোক, হিজাব অপসারণ, লিঙ্গ মিশ্রিত করা, যৌনতা বৃদ্ধি এবং পরিবারগুলির চূড়ান্ত ভাঙ্গন আফগান মহিলারা চায় না। পশ্চিমা মহিলারা যদি সত্যিই উন্মুক্ত মনের অধিকারী হয়, যেমনটি তারা দাবি করে, তবে তাদের অবশ্যই ধর্মপ্রাণ আফগান মুসলিম মহিলাদের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং শিখতে হবে যাদের কাছে প্রকৃত দীর্ঘমেয়াদী সুখের সন্ধান রয়েছে।
তারা সম্মানজনকভাবে ইসলামিক আমিরাত সরকারের অধীনে বসবাস করে যারা তাদের মর্যাদা, সম্মান এবং সুস্থতার জন্য উদ্বিগ্ন। তারা পশ্চিমা নারীদের থেকে ভিন্ন, তারা অদ্ভুত। তারা লম্পট পুরুষদের আনন্দের জন্য যৌনতাপূর্ণ নয়, বরং ইসলামিক হিজাব পরিধানের মাধ্যমে সুরক্ষিত এবং আবদ্ধ। ইসলামিক হিজাব তাদের সম্মান রক্ষা করে এবং অসৎ উদ্দেশ্যের মানুষকে দূরে রাখে। যেমন পশ্চিমা মিডিয়া দাবি করে যে, ’তাদেরকে নাকি সমাজ থেকে ‘অদৃশ্য’ হতে বাধ্য হচ্ছ ‘ তারা অবশ্যই তেমন নয়। বরং তারা সমাজের সক্রিয় সদস্য যারা শরিয়ত ও হিজাবের সীমারেখার মধ্যে সমাজের উন্নতিতে অংশগ্রহণ করে। নিশ্চিতভাবেই, একজন মহিলার পক্ষে এমন আইন দ্বারা আবদ্ধ হওয়া দুর্ভাগ্যজনক নয় যা তাদের নিজেদের সম্মানই বৃদ্ধি করে।
আফগান নারীরা পশ্চিমা নারীদের জীবনধারাকে ঘৃণার চোখে দেখে। ইসলামিক হিজাবকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পশ্চিমাদের দাওয়াত গ্রহণ করাকে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের নিজেদের দীর্ঘমেয়াদী সুখকে বিপন্ন করার সমতুল্য বলেেই মনে করে। আফগান নারীরা কেবল শোষিত পশ্চিমা নারীর জন্য আদর্শ হতে পারে যাদের কাছে নিজেদের আত্মসম্মান ও পবিত্রতার ধারণাটি আজও অপরিচিত।
আমেরিকান নায়ক ম্যালকম এক্স যথার্থই বলেছিলেন যে,
যেকোন দেশের নৈতিক শক্তি বা নৈতিক দুর্বলতা দ্রুত পরিমাপ করা যায় রাস্তায় নারীদের পোশাক এবং তাদের মনোভাব দ্বারা – বিশেষ করে যুবতী নারীদের ।
মূলত পশ্চিমা বিশ্ব আফগান সমাজের সকল নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ছিনিয়ে নিতে আফগান মুসলিম নারীদের ইসলামিক পোশাক দিয়েই শুরু করতে চায় ।
কলমে – সাফিয়া
সূত্র- ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান